Description:

চিড়িয়াখানা এমন একটি জায়গা যেখানে হরেক রকমের পশুপাখির সমাহার হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পশু-পাখি ভীষন পছন্দ করেন তাদের জন্য চিড়িয়াখানা আজও সচল। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা সুবিশাল এবং বেশ পুরাতনও বটে। জায়গা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে অনেকে পর্যটক পিকনিকের উদ্দেশ্যেও এসে থাকে। চিড়িয়াখানায় শিশু কিশোরদের আনা গোনাই বেশি হয়ে থাকে।

অবস্থান ও স্থাপত্য এবং নামকরনঃ
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে স্থাপিত। এটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালে বর্তমান অবস্থান মিরপুরে স্থানান্তরিত হয় এটি। চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন। বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ দর্শনার্থী ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে থাকেন। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়।
মিরপুর ১ নং বাস স্ট্যান্ড থেকে হেটে যেতে ৪৫ মিনিট এবং রিক্সাতে গেলে ২০ মিনিট সময় লেগে থাকে।


History:

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঢাকা শহরের শাহবাগে তৎকালীন নবাবরা একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার উদ্ভব করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে একটি চিড়িয়াখানার অভাব অনুভূত হয়। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে বর্তমান ঈদগাহ এলাকায় ৪-৫ একর জায়গা জুড়ে ছোট আকারের একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। চিড়িয়াখানাটিতে একটি বড় পুকুর এবং পাড়ের খানিকটা জায়গা জুড়ে একটি বলাকা প্রদর্শনী ছিল। সেখানে রাজহাঁস, পাতিহাঁস, শীতের পরিযায়ী হাঁস এবং অন্যান্য পাখি ছিল। হাড়গিলা, সারস এবং ময়ূরও প্রদর্শিত হত। বানর, হনুমান আর হরিণ ছিল। সরিসৃপের মধ্যে অজগর ও কুমির ছিল প্রধান।
ঢাকায় একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন কৃষি, সহযোগিতা ও ত্রাণ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে বছর ২৬ ডিসেম্বর প্রস্তাবনাটি চুড়ান্তভাবে ঘোষিত হয়। এরপর চিড়িয়াখানা স্থাপনের কোনপ্রকার উদ্যোগ ছাড়াই এক দশক পার হয়ে যায়। ১৯৬১ সালের ১১ মার্চ খাদ্য ও কৃষি বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের বরাতে এক উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ পরিষদের কাজ ছিল প্রস্তাবিত চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দান। তদানীন্তন পশুপালন সার্ভিসের পরিচালক এই পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।


Attractions:

বিস্তৃতি ও প্রাণী বৈচিত্র্যঃ
চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর। চিড়িয়াখানার চত্বরে ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে।চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। তবে চিড়িয়াখানায় ১৩৮ প্রজাতির ২ হাজার ৬২২টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।

প্রাণী জাদুঘরঃ
চিড়িয়াখানার ভিতরেই রয়েছে প্রাণী জাদুঘর। এখানে ঘোড়ার ডিম থেকে শুরু করে হাজার বছর পুরনো কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়াও নানা প্রজাতির সাপ ও অন্যান্য প্রানি রয়েছে এই প্রাণী জাদুঘরে। এরই সাথে দেখা যাবে বিভিন্ন প্রজাতি প্রানীর কংকাল, বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্ত প্রনীর খোজও পাওয়া যাবে এই জাদুঘরে।


What To Do:

যেভাবে ঘুরতে হবে চিড়িয়াখানাঃ
চিড়িয়াখানার ঘুরার জন্য চিড়িয়াখানা ঢুকে প্রথমে সোজা যেতে হবে। একটু সামনে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে পুরো চিড়িয়াখানার একটি বড় ম্যাপ। সাথে সামনেই দেখা যাবে একটি বানরের খাঁচা। বানরের সাথে দেখা করার পর যেতে হবে হাতের বা দিকে।
হাতের বা দিক দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আস্তে আস্তে ডান দিকে যেতে হবে। এভাবে করেই পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরা শেষ করতে হবে। চিড়িয়াখানাও এই নিয়ম টা ই দিয়েছে। যাতে পুরো চিড়িয়াখানার সব গুলো প্রানির দেখা পাওয়া যায়।


যা যা করতে হবে চিড়িয়াখানার ভিতরেঃ
১.চিড়িয়াখানার প্রাণীদের খাবার দেয়া থেকে বিরত থেকে বিরত থাকতে হবে।
২.হিংস্র প্রানি যেমনঃ বাঘ, সিংহ, সাপ এসব প্রাণীদের খাঁচা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।।
৩.সাথে যদি ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে, তাদেরকে সব সময় কাছে রাখতে হবে। প্রয়োজনে হাত ধরে রাখতে হবে। কারন, চিড়িয়াখনা অনেক বড় এবং সবসময় এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম থাকে। একবার যদি বাচ্চা হারিয়ে যায়, তাহলে তাকে খুজে পেতে অনেক সময় লাগবে। এর ফলে আনন্দময় ভ্রমন নিরানন্দ হয়ে যাবে।।আর যদি, এরকম সমস্যায় কেউ পড়ে যায়, তাহলে চিন্তিত না হয়ে, চিড়িয়াখানার ভিতরে একদল সদস্য রয়েছে, যারা সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে সবসময়। ভিতরে চুকলেই তাদের মাইকের শব্দ পাওয়া যায়।
৪.চিড়িয়াখানা ঢুকার পূর্বে সাথে পানি এবং শুঁকন খাবার নিয়ে নেওয়াটা ভালো হবে। কারন, এতো বড় চিড়িয়াখানা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, উচু নিচু যায়গা দিয়েই ভ্রমন করতে হবে।
৫.যতটা সম্ভব খোলামেলা জামাকাপড় পড়ে চিড়িয়াখানা যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে ক্লান্তি কম লাগবে।
৬.ভ্রমন উপযোগী জুতা পরার চেষ্টা করুন।




উপসংহারঃ
সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে যে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা পর্যটকদের জন্য খুব সুন্দর একটি স্থান, বিশেষ করে যারা পশুপাখি ভালবাসেন।