Description:
মসজিদ একটি ইসলামী পবিত্র স্থান। মসজিদ একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক বাংলা অর্থ 'সিজদার স্থান'। মুসলিমরা মসজিদে এসে তাদের দৈনিক সালাত আদায় করেন সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। পৃথিবীতে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে এবং এসব রাষ্ট্রে রয়েছে ঐতিহাসিক কিছু মসজিদ। আমাদের বাংলাদেশও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং আমাদেরও কিছু ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে যার মধ্যে বাইতুল মোকাররম মসজিদ অন্যতম, তারই সাথে এটি আমাদের জাতীয় মসজিদও।
অবস্থানঃ
বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। এটি একটি বিখ্যাত মসজিদ তাই ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সহজেই বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আসা যাবে।
History:
মসজিদটি নকশা করেছিলেন স্থপতি আবদুলহুসেইন এম থারিয়ানি । ১৯৫৯ সালে, সেই আমলের বাওয়ানী জুট মিলসের মালিক হাজী আবদুল লতিফ বাওয়ানী পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক প্রশাসক মেজর জেনারেল ওমরাও খানকে ঢাকায় একটি বৃহৎ মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। ওমরাও খান এ মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করতে রাজি হন। একই বছর 'বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমিটি' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং নতুন ঢাকা ও পুরান ঢাকার মধ্যে ৮.৩০ একর জমি বেছে নেওয়া হয়েছিল। তখনকার মসজিদটির বর্তমান স্থানে একটি বিশাল পুকুর ছিল। এটি 'পল্টন পুকুর' নামে পরিচিত ছিল। পুকুরটি ভরাট হয়ে যায় এবং ১৯৬০ সালের ২৭ শে জানুয়ারি সেই আমলের পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান কাজ শুরু করেন। শুক্রবার, জানুয়ারী ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের জন্য নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
পরিকল্পনার মধ্যে কমপ্লেক্সের মধ্যে দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার এবং পার্কিংয়ের অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও মুসলমানদের জন্য গম্বুজটি মসজিদের ঐতিহ্য বহন করে, তবুও এই স্থাপত্যটি সেই ঐতিহ্যটি বজায় রাখেনি। এর প্রধান প্রার্থনা স্থানের ছাদের উপরে একটি গম্বুজবিহীন মসজিদটি অবশ্যই একটি অনন্য পরীক্ষা ছিল। মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল যখন দেশটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের অংশ ছিল।
২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অনুদানের মাধ্যমে এই মসজিদটি প্রসারিত করা হয়েছিল।
Attractions:
স্থাপত্যশিল্পঃ
মসজিদটিতে একই সাথে বেশ কয়েকটি আধুনিক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যদিও এটি মুঘল স্থাপত্যের প্রচলিত নীতিগুলি সংরক্ষণ করে যা কিছু সময়ের জন্য ভারতীয় উপ-মহাদেশে প্রাধান্য পেয়েছে। বায়তুল মোকাররম এর বড় ঘনক্ষেত্র যা আরবের মক্কা শরীফের মত করে বানানো হয়েছে। এটি একটি লক্ষণীয় গঠন বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলাদেশের অন্য কোন মসজিদের সাথে এটির মিল নেই।
অভ্যন্তরীন সজ্জাঃ
বাইতুল মোকাররম মসজিদটির দুটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ রয়েছে। যা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নামাজ হলে পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাস প্রবেশ করতে সাহায্য করে। নামাজের স্থানটি আধা-বৃত্তাকার পরিবর্তে আয়তক্ষেত্রাকার। তিন দিকে বারান্দা দ্বারা ঘেরা প্রধান নামাজ কক্ষের মিহরাবটির আকৃতি আয়তাকার, যার আয়তন ২৪৬৩.৫১ বর্গ মিটার। সমগ্র মসজিদ জুড়েই অলংকরণের আধিক্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো মসজিদ জুড়ে অতিরিক্ত অলঙ্করণ এড়ানো হয়, যেহেতু অলঙ্করণ হ্রাস করা আধুনিক স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য।
বাহ্যিক সজ্জাঃ
মসজিদটি খুব উঁচু জায়গা জুড়ে রয়েছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভবনটি ভবনের স্তর থেকে আট তলা এবং ৯৯ ফুট উঁচু। মূল পরিকল্পনা অনুসারে মসজিদের মূল প্রবেশপথটি পূর্ব দিকে ছিল। পূর্বে 'শান' দক্ষিণে এবং উত্তর দিকে অজু স্থান সহ মোট ২৯,০০০ বর্গফুট জায়গা নেয়া হয়েছে। বায়তুল মোকাররম শুরু হওয়ার সময় অযু করার স্থানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছিল। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার উপর দুটি ছোট গম্বুজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রধান ভবনের উপর গম্বুজ না থাকার অভাবকে ঘোচানো হয়েছে। এই পোর্টিকোগুলির উচ্চতা তিনটি খরগোশের পা আকৃতির খিলান ধারণ করে, যার মাঝের অংশটি বাকীগুলির চেয়ে বড়।
এই মসিজেদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় এটির বাগান অংশ। মসজিদের বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বাগান। বাগানটি মুঘল শৈলীতে স্থাপন করা।
What To Do:
মসজিদ ভবনঃ
বায়তুল মোকাররম মসজিদটি ৮ তলা। নীচতলায় রয়েছে বিপণী বিতান ও বিশাল মার্কেট। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। বর্তমানে মূল মসজিদ এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব সাহান মিলিয়ে সর্বমোট ৪০ সহস্রাদিক মুসল্লী একত্রে নামায আদায় করতে পারেন। মসজিদের অভ্যন্তরে ওযুর ব্যবস্থাসহ মহিলাদের জন্য পৃথক নামায কক্ষ ও পাঠাগার রয়েছে। ১ম তলার আয়তন ২৬,৫১৭ বর্গফুট, দ্বিতীয় তলার আয়তন ১০,৬৬০ বর্গফুট, তৃতীয় তলার আয়তন ১০,৭২৩ বর্গফুট, চতুর্থ তলার আয়তন ৭৩৭০ বর্গফুট, পঞ্চম তলার আয়তন ৬,৯২৫ বর্গফুট এবং ষষ্ঠ তলার আয়তন ৭৪৩৮ বর্গফুট। জুম্মা ও ঈদের সময় বাড়তি ৩৯,৮৯৯ বর্গফুটে নামাজ পড়া হয়। মহিলাদের ৬,৩৮২ বর্গফুটের নামাজের জায়গা রয়েছে, যা মসজিদের তিনতলার উত্তর পাশে অবস্থিত। পুরুষদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৬,৪২৫ বর্গফুট। মহিলাদের ওজুখানার জন্য ব্যবহৃত হয় ৮৮০ বর্গফুট। মসজিদের প্রবেশ পথটি রাস্তা হতে ৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
কেনো যাবেন বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেঃ
এটি একটি ধর্মীয় স্থান। মুসলিমদের প্রানকেন্দ্র হলো মসজিদ। এছাড়াও যারা অমুসলিম বা অন্য ধর্মের অনুসারি আছে তারাও এই স্থান পরিদর্শন করতে পারে। এটির স্থাপত্যশিল্প যেকোনো পর্যটকের মনকে প্রাশান্তি দিবে।
উপসংহারঃ
প্রতি শুক্রবারে দূরদুরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে এই মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে। এই মসজিদে একসাথে প্রায় ৪০০০০ মানুষ নামজ আদায় করতে পারে। অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ দর্শন করতে আসে প্রতিদিন। সব মিলিয়ে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ অসাধরন একটি স্থান।