Description:
দেশের উত্তরবংগের বাকি জেলাগুলোর মতো বগুড়াও অন্যান্য জায়গা থেকে বরাবরই কিছুটা আলাদা।এখানকার আবহাওয়ার মতোই সবকিছুই কেমন জানি নিয়ন্ত্রিত।নেই বড় বড় শহরের মতো অতিশয় চাকচিক্যতা,আবার না আছে ব্যস্ত জীবনের উপলক্ষের অভাব।ছিমছিমে এক শান্তি নিয়ে যেন এই জায়গার মানুষগুলো অনবরত ছুটে চলছে অজানা কিছুর উদ্দেশ্যে,যা আমার বা আপনার মতো দুইদিনের অতিথিদের বোধগম্য হবার উপায় নেই।তবুও কি যেন এক মায়ার টানে ভ্রমনপিপাসুরা চলে যায় বগুড়াতে।
যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকার গাবতলী বা মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে বগুড়ার বাস পাওয়া যাবে।টিকেটের মূল্য ৩৫০ টাকা।এছাড়া ট্রেনে যেতে চাইলে সপ্তাহে ৬ দিন ঢাকা টু বগুড়া ট্রেন আছে যেখানে ৩৩০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূল্যের টিকিট পাওয়া যায়।
দর্শনীয় স্থানঃ মহাস্থানগড়,বেহুলালখিন্দর বাসরঘর,এডওয়ার্ড পার্ক,সাতরাস্তার মোড় এবং করোতোয়া নদী।
মহাস্থানগড়ঃ মানুষ যতই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামনে চলুক না কেন,যতই পুরাতনের পিছুটান কাটিয়ে আগামীর হাতছানিতে সাড়া দিক না কেন, পশ্চাতিস্থত জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ অবিচ্ছিন্ন।আর এ কারণেই বুঝি প্রত্নতত্ত্বের প্রতি প্রত্যেকের অসীম এক কৌতূহল।এরকমই এক প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গা হল মহাস্থানগড়।
যদি বলা হয়ে থাকে বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত তাহলে এক কথায় যে উত্তরটা আসে তা হল মহাস্থানগড়।বাংলাদেশের প্রাচীন সমস্ত পুরাকীর্তির মাঝে এটি অন্যতম প্রসিদ্ধ।এককালীন বাংলার রাজধানী থাকা এই নগরী একসময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়।বলা হয়ে থাকে একসময় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা এখানে আসতেন লেখাপড়া করতে।এখান থেকে দীক্ষা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার উদ্দেশ্যে।
বগুড়া থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটিতে যাবার উপায় বাস অথবা ভাড়া করা সিএনজি।চাইলে গাড়ি ভাড়া করেও ঘোরার সুবিধা আছে।
মহাস্থানগড়ের পুরো জায়গা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন মাজার শরীফ,খোদার পাথর ভিটা,মানকালীর ঢিবি,ভাসু বিহার,ভিমের জঙ্গল এবং জাদুঘর।এই জাদুঘরে মৌর্য,গুপ্ত,পাল,সেন ও অন্যান্য রাজবংশের হাজার বছরের পুরানো স্মৃতিচিহ্ন সোনা,রূপা,লোহা,ব্রোঞ্জ,কাসাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব পদার্থ,পোড়ামাটির মূর্তি,কালো পাথরের মূর্তি,বিভিন্ন শিলালিপি,অস্ত্র,অলংকার দিয়ে সজ্জিত এই জাদুঘরে হাটার সময় নিজের অজান্তেই কখন যে কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া হয় সেটা টেরই পাওয়া যায়না।অদ্ভুত রকমের এক অনুভূতির জন্ম দেয় এই জায়গাগুলো।এবং আপনি যদি কিছুটা হলেও ভ্রমণপিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মনকেও নাড়া দেবার কথা এই মহাস্থানগড়।
বেহুলা-লখিন্দর বাসরঘরঃ বগুড়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বেহুলার বাসরঘর জায়গাটি দেখে এটি বিভিন্ন জায়গায় ছোটকাল থেকে দেখে আসা মহাস্থানগড়ের ছবির মতো লাগে।আসলে মহাস্থানগড় হিসেবে দেখা ছবিটিই প্রকৃতপক্ষে বেহুলার বিখ্যাত বাসরঘর।তাই পর্যটকরা জায়গাটিতে যেতে ভুলবেন না।
বলা হয়ে থাকে মনসাদেবীর দেওয়া অভিশাপ থেকে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে চাঁদ সওদাগর তার বিয়ের সময় এমনভাবে বাসরঘর তৈরি করেন যাতে কোনভাবেই ছেলেকে সর্প দংশন না করতে পারে।কিন্তু তারপরও সাপের ছোবলে ছেলেটির মৃত্যু হলে তার নববিবাহিতা স্ত্রী বেহুলা স্বামীর মৃতদেহের সাথে ভেলায় চড়ে বসেন এবং শেষ পর্যন্ত মনসাদেবীর কাছ থেকে স্বামীকে জীবিত করে নিয়ে আসেন।এরকম এক গল্পের পটভূমিতে গড়ে ওঠা জায়গাটি দেখেই আসলে অন্যরকম ভাবের সৃষ্টির হয়।
এডওয়ার্ড পার্কঃ বগুড়ার গোহালি রোডে অবস্থিত বিখ্যাত এডওয়ার্ড পার্কটি ১৯০১-১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় যা তৎকালীন মহারানী ভিক্টোরিয়ার পুত্র আলব্রেট এডওয়ার্ড এর নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
এই পার্কের বিশেষ আকর্ষণীয় স্থাপনা হল উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরী এবং ড্রামাটিক এডওয়ার্ড হল।তৎকালীন সময়ে এই হলটি শহরের টাউন হল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।নানা ধরনের খেলাধুলার উপকরণ দিয়ে সজ্জিত থাকায় এই পার্কটি বগুড়া শহরের মানুষদের এবং দুদিনের অতিথি হয়ে আসা পর্যটকদের জন্য একটি প্রমদ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
সাতরাস্থার মোড়ঃ বগুড়ার যেখানেই যাওয়া হোক না কেন সাতরাস্তার বা সাতমাথার মোড় ব্যবহার করতে হয়।বলতে গেলে বগুড়া শহরের যত ব্যস্ততা এই সাতমাথাকে কেন্দ্র করে।এই রাস্থায় বেশ কতগুলো স্ট্রিট ফুডের দোকান আছে।আছে হরেক রকমের মিষ্টির দোকান।সময় করে এই জায়গা থেকে খাওয়া দাওয়া করাটা আপনার ভ্রমনের অংশ করে নিবেন।
করোতোয়া নদীঃ রাজশাহী শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া করোতোয়া নদীর একটি শাখা বগুড়ায় অবস্থিত। বগুড়ার বনানী রোডে থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে করোতোয়ার দেখা পাওয়া যায়।মূলত মহাস্থানগড়টি এই করোতোয়াকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।কালের পরিক্রমায় আজ করোতোয়া প্রায় মৃতপ্রায় হলেও বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর এই নদ মোহনীয় এক দৃশ্য ধারণ করে।নদের পাড়ে বসে ঝির ঝির বাতাস গায়ে মাখতে মাখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টার কাটিয়ে দেওয়া অথবা পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নৌকায় ভ্রমনের ব্যাপারটা দারুন লাগে।
টুকটাক মনে রাখাঃ
-বগুড়ার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলো কিছুটা দূরে দূরে হওয়ায় গাড়ি বা সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে ঘোরা হলে সময় এবং পরিশ্রম দুটোই সাশ্রয়ী হয়।
-বগুড়ার স্ট্রিট ফুড গুলো ট্রাই করতে ভুলবেন না।
-সকালে ১০ টার আগে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর ফটক পর্যটকদের জন্য ওপেন হয়না
-হিসেব করে চললে জনপ্রতি ১৮০০-২০০০ টাকার মাঝেই ঘোরা হয়ে যায়।
-দুইদিনই বগুড়া ঘোরার জন্য যথেষ্ঠ।
-সবশেষে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।কারণ দেশটা আমাদেরই,তাই দেশটা পরিষ্কার রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।