Description:
ঘোরাঘোরি করার অভ্যাস থাকার সুবাদে প্রায় অনেক জায়গাতেই যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার।এসব জায়গার মাঝে কিছু জায়গার সৌন্দর্যের কথা যেমন প্রায় সবারই জানা,তেমনি এমন বহু জায়গাও আছে যেগুলোর নামটিই খালি মানুষ জানে।জায়াগাটিতে একান্ত নিড়িবিলিতে বেড়ে ওঠা সৌন্দর্যটি অধিকাংশের মানুষের অবগতের বাইরেই থেকে যায়।এরকমই এক জায়গা হল ময়মনসিংহ।
ব্রক্ষপুত্রের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা উপশহরটি কিছুটা এলোমেলো ভাবে গড়ে উঠলেও অদ্ভুত রকমের এক মায়া দিয়ে ঘেরা শহরের প্রতিটি অলিগলি।উন্নত শহরের চাকচিক্যতার অভাব থাকলেও বৃষ্টির জলে টইটম্বুর হয়ে থাকা ব্রক্ষপুত্রের জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ,কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইলের পর মাইল জুড়ে সবুজ কার্পেটের মতো ছড়িয়ে থাকা ধানক্ষেত,ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত হওয়া কিছু পুরাতন রাজবাড়ি আর ইতিহাসঘেরা শহরটির স্মৃতিবহনকারি জাদুঘরগুলো কংক্রিটে ঘেরা জীবনে অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেবে।
যাওয়ার উপায়ঃ
ঢাকার মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় কিছুক্ষণপর পর এনা বাস ছাড়ে।টিকিটের দাম পড়বে ২২০ টাকা।আরও কমে যেতে চাইলে কিছু লোকাল বাসও আছে,তবে সেগুলোতে অনেক যাত্রী উঠাবার এবং যাত্রাপথে এখানে সেখানে থামার জন্য সময় একটু বেশি লাগতে পারে।বাস ছাড়াও ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ট্রেন আছে যা প্রতিদিন সকাল ৮টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়।তবে ট্রেনের টিকেট বেশ কয়েকদিন আগে থেকে কেটে রাখতে হয়।টিকেটের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ এর মাঝে পড়তে পারে।
দর্শনের স্থানঃ
ব্রক্ষপুত্র নদ,জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা,শশীলজ জমিদার বাড়ি,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,কেওটখালি ব্রিজ,ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ,আনন্দমোহন কলেজ,বিদ্যাময়ী স্কুল,হাসান মঞ্জিল,ময়মনসিং জাদুঘর।
ব্রক্ষপুত্রের তীরঃ
পুরো ময়মনসিংহ শহরটি ব্রক্ষপুত্রের তীর ঘেষে দাড়ানো,তাই অনেকজায়গা থেকেই ব্রক্ষপুত্র নদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।তবে জয়নুল আবেদিন পার্ক নামে পরিচিত জায়গাটিই ব্রক্ষপুত্র দেখার জন্য বেশি পরিচিত।বাস স্ট্যান্ড থেকে নেমে রিকশা বা অটো তে করে সহজেই পার্কটিতে চলে যাওয়া যায়।এখানে নদটির পাশে বসে ঝির ঝির বাতাস গায়ে মাখতে মাখতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা যায়।ইচ্ছে হলে তীরে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকাগুলো ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নেওয়া যায়।ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৩০০ টাকা মতো লাগে।
ব্রক্ষপুত্র দেখার সবচেয়ে ভাল সময় বর্ষাকাল।বৃষ্টির পানিতে ভরা নদটিতে বৈঠা ঠেলা নৌকায় করে ঘোরার সময় পানির যে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হয়, শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হর্নের শব্দ শোনায় অভ্যস্থ কানে তা বড় অপূর্ব লাগে।শীতকালেও বক্ষপুত্রের অন্যরকম রূপ দেখা যায়।পানি কম থাকায় দুকূল প্রায় অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে,নদের মাঝখান দিয়ে দেখা দেয় ছোটখাট চড়।এমনকি কখনও কখনও পানি অনেক কম থকলে পায়ে হেটেই পুরো নদী পার হয়ে আসা যায়।
জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাঃ
জয়নুল আবেদিন পার্ক ঘেষেই এই সংগ্রহশালাটি অবস্থিত।এখানে রয়েছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পি জয়নুল আবেদিনের বহুচিত্রকর্ম,নানা স্মৃতিসামগ্রি।আগ্রহ থাকলে এই জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এটি।প্রায় ১৩০০ একর জমির উপর নির্মিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই সবুজের সমারোহ।কোথাও রয়েছে অবিরত ধানক্ষেত,কোথাও আমের বিশাল বাগান,কোথাও মৎস চাষের জন্য করা ছোট ছোট ঘের,কোথাও আবার নাম না জানা গাছে ঘেরা উদ্দ্যান।এইরকম সবুজে ঘেরা গাছগাছালির মাঝখানদিয়ে বিছানো রয়েছে রেললাইন যেটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম দৃশ্যনন্দন একটি স্থান।সবুজ বন আর পাখিদের কলকাকলিতে মুখর পরিবেশে এই রেললাইন ধরে চলে ঝিক ঝিক শব্দ করে চলে যাওয়া ট্রেনটি অসাধারণ এক ছবির সৃষ্টি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও একটি জায়গা বক্ষপুত্রের পাড়।যারা একটু নিরিবিলিভাবে নদের তীরে বসে সময় কাটাতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এই পাড়টি উপযুক্ত।এখানে জয়নুল আবেদিন পার্কের মতো তেমন কোলাহল নেই।তাই একান্ত নিজের মতো করে নদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
শশীলজ জমিদার বাড়িঃ
ময়মনসিংহের কাচারি রোডে অবস্থিত শশীলজ মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ি বলেও পরিচিত।এটি বর্তমানে ময়মনসিংহের মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পুরো বাড়িটি প্রায় ৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত।এর মূল ফটকে ১৬ টি গম্বুজ।ভেতরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে ছাদ থেকে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি।বাসভবন ছাড়াও বাড়িটিতে আছে নাচঘর আর স্নানঘর।স্নানঘরে রয়েছে একটি সুড়ংগ পথ।ধারনা করা হয় এই পথ দিয়ে একসময় শহর থেকে বেশ দূরে অবস্থিত মুক্তাগাছা যাবার ব্যবস্থা ছিল।মূল ভবনের পেছনভাগেও রয়েছে আরেকটি স্নানঘর যেটির সামনে রয়েছে পুকুর।এই পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো।বলা হয়ে থাকে এখানে বসে রানী পুকুরে হাসের খেলা দেখতেন।শশীলজের পুরো জায়গাটির সবজায়গা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।বিশেষ করে মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় মূল ভবনের ভেতরে ঢোকা নিষেধ।এই রাজবাড়িটির ফটক বিকাল ৫ টার পর দর্শনার্থির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কেওটখালি ব্রিজঃ
কেওটখালি এলাকায় ব্রিজের মোড়ে মাথার উপড় দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইন দেখে থামতে হবে।ব্রিজটিতে উঠার রাস্তাটা একটু আড়ালে হওয়ায় খুজে পাবার জন্য আশেপাশের দোকানদার বা রিকশাওয়ালাদের জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।মাটির টিলা কেটে করা উপর দিকে উঠে যাওয়া পথটি ধরে হেটে গেলেই ব্রিজে এসে পৌছানো যায়।পুরো ব্রিজটিতে রেললাইন করা।আর ব্রিজের নীচ দিয়ে বয়ে যায় বক্ষপুত্রের পানি।তাই ব্রিজ ধরে হাটার সময় রেললাইনের ফাক দিয়ে নীচের পানি দেখা যাওয়ার কারণে অনেকে ভীত হয়ে পড়ে।তবে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই রেললাইন থেকে আলাদা দাড়াবার জায়গা আছে।এই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে একদম কাছ থেকে ট্রেন যাওয়া এবং দুপাশে ব্রক্ষপুত্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।ব্রিজটিতে উঠা কিছুটা কষ্টের হলেও এটি আমার দেখা ময়মনসিংহের অন্যতম সুন্দর একটি স্থান।
এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ,আনন্দমোহন কলেজ,বিদ্যাময়ী স্কুল,হাসান মঞ্জিল,ময়মনসিং জাদুঘর আছে যেগুলো রিকশাওয়ালা কে বললেই নিয়ে যাবে।
টুকটাক মনে রাখাঃ
-রিকশা বা অটো ময়মনসিংহে চলাচলের মূল বাহন।
-খাবার দাবারের অনেক রেস্তোরা পাওয়া যাবে রাস্তাঘাটে যেখানে কমমূল্যে ভাল খাবার পাবেন।
-যেখান থেকেই ব্রক্ষপুত্র ঘোরার জন্য নৌকায় উঠেন না কেন মাঝিদের সাথে দরদাম করে উঠবেন।
-একদিনই ময়মনসিংহ ঘোরার জন্য যথেষ্ঠ।
-হিসেব করে চললে জনপ্রতি ১০০০-১২০০ টাকার মাঝেই ঘোরা হয়ে যায়।
-সবশেষে ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।কারণ দেশটা আমাদেরই,তাই দেশটা পরিষ্কার রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।